আগামী ২৫ তারিখ থেকে শুরু হবে ১০৯ জব্বারের বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা

শওকত আলী পারভেজ ।। আগামী ২৫ এপ্রিল রোজ বুধবার চট্টগ্রামের লালদিঘির ময়দানে তিনদিন ব্যাপি শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের ১০৯ তম বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা।

কখনো গ্রীষ্মের তিব্র তাপদাহ। বাতাসের সাথে আগুনের হুলকির মতো গায়ে এসে লাগছে। আবার কখনো নেমে আসছে ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাত। সবকিছু উপেক্ষা করে সোমবার থেকে নগরীর লালদিঘি ময়দানে জমে ওঠবে তিনদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক বৈশাখী মেলা। লালদীঘির মাঠসহ প্রায় চার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে দোকানিরা বসছে রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে।

হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস থেকে শুরু করে চুড়ি ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ বেতের নানা তৈজসপত্র, কাঠের পুতুল, নকশী কাঁথা, মাছ ধরার চাঁই, বেতের তৈরি চালুনি, তৈজসপত্র, মাটির তৈরি পুতুল, মাটির তৈরি খেলনা, ফুলদানি, তালপাখা, টব, হাঁড়ি-পাতিল, কুলা, গাছের চারা, দা-বটি, বৈশাখী ফল, খাঁচার পাখি, সবকিছুই পাওয়া যাবে মেলায়। এখানে থাকবে ঘর সাজাবার উপকরণ, তেমনি থাকবে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী। এছাড়া থাকবে মুড়ি মুড়কি, লাড্ডুর মতো রসনা তৃপ্তির নানা উপকর।
অনুষ্টিত হবে মেলার প্রধান আকর্ষণ জব্বারের বলী খেলার ১০৯ তম আসর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভুভুভেলাসহ নানা বাদ্য বাজনার আনন্দ উল্লাস মেলায় জানান দিচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষের পাশাপাশি শিশু কিশোরদের উপস্থিতি। নানা পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতারদের দরকষাকষিতেও উৎসবের উম্মাদনা। নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষ শীতল পাটিসহ গৃহস্থলী জিনিশপত্র কিনতে মরিয়া।

তিনদিনব্যাপী মেলার প্রধান আকর্ষণ জব্বারের বলী খেলা এই আয়োজন। বলী খেলাকে কেন্দ্র করে মেলা জুড়ে দেখা দেয় মানুষে আরেক উৎসাহ উদ্দিপনা। বিভিন্ন বলির শরীর কসরত দেখেও দর্শকরা উদ্বেলিত হয়ে উঠে।

আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অহংকারে পরিণত হয়েছে বহু আগ থেকেই। বর্তমানে দশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে পরিণত হয়েছে এই মেলা ও বলী খেলা। সেই ১৯০৯ সাল থেকে এর সূচনা। ২৫ এপ্রিল ১২ বৈশাখ বসছে বলী খেলার ১০৯ তম আসর। বৈশাখী মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ময়দানে নাগরদোলা,সার্কাস ও বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। লালদীঘি ময়দান থেকে আন্দরকিলা, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত দোকানিরা বসে গেছেন পসরা নিয়ে। বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস,চুড়ি, ফিতা, রঙ্গিন সুতা, হাতের কাঁকন,নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ ও বেতের নানা তৈজসপত্র, কাঠের পুতুল, নকশী কাঁথা, প্লাস্টিক সামগ্রী। এছাড়াও বিক্রি হচ্ছে মুড়ি মুড়কি, লাড্ডুসহ হরেক রকম উপাদেয় খাবারদাবার। সারা বছর চট্টগ্রামের মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন এই মেলার জন্য। কারণ এতে পাওয়া যায় নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী আর ঘর সাজাবার উপকরণ।

জানা যায়, ১০৯ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীর বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর আয়োজন করেছিলেন প্রীতি কুস্তি নামক এ বলী খেলার। মূলত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলতে ১৯০৯ সালে তিনি এ বলী খেলার আয়োজন করেছিলেন। তারপর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপমহাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক বাহকে পরিণত হয়েছে। দেশের আরো কিছু স্থানে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেসব আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কোন কোন এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা এখনো ধরে আছে তার কীর্তিময় ইতিহাস।

Related posts

Leave a Comment