শাহনাজ বেগম ।।
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদন
এক সময় গৃহস্থ বাড়িতে,বনে বাদাড়ে যত্রতত্র দেখা গেলেও এখন ক্যালেন্ডার এর পাতায় কিংবা ইন্টারনেটে চার্জ দিয়ে খূঁজতে হয় এ সীমকে, কামরাঙা শিম দেখতে অনেকটা কামরাঙা ফলের মত। তাই এই শিমের নামকরণ করা হয়েছে কামরাঙা শিম। এই শিম আমাদের দেশে সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এই শিমের কচি ফল বা শিম সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়াও এই শিম গাছের পাতা, ফুল ও আলুর মতো শিকড়ও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই আসুন জেনে নিই এর চাষপদ্ধতি।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
১। কামরাঙা শিম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জমিতে চাষ করা যায়।
২। এই শিমের এমন কিছু জাত আছে যেগুলো আলোক সংবেদনশীল নয় এবং বছরের যেকোন সময়ে চাষ করা যায়।
৩। কামরাঙা শিম প্রায় সবধরনের মাটিতেই চাষাবাদ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ মাটিতে এই শিম ভালো জন্মে।
চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন
১। আমাদের দেশে সাধারনত কামরাঙা শিমের চাষ বীজের মাধ্যমে করা হয়। এছাড়াও এই শিমের শিকড়ের মাধমেও চারা তৈরি করা যায়।
২। আমাদের দেশে কামরাঙা শিমের চাষ করার উপযুক্ত সময় হল জুলাই মাস থেক আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়। এই সময় বীজ বপন করলে কামরাঙা শিমের ভাল ফলন পাওয়া যায়।
৩। কামরাঙা শিম চাষ করতে মাদা তৈরি করে এই শিমের বীজ বপন করা হয়। প্রতিটি মাদায় ২ থেকে ৩টি করে বীজ বপন করতে হবে। আবার জমিতে কামরাঙা শিমের বীজ ছিটিয়েও বপন করা হয়। কামরাঙা শিমের বীজ গজাতে ৫ থেকে ৮ দিন সময় লাগে।
সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
১। বাড়িতে কামরাঙা শিম চাষ করার জন্য তেমন কোন সারের প্রয়োজন হয় না। তবে বানিজ্যিকভাবে কামরাঙা শিম চাষ করতে হলে অবশ্যই সার প্রয়োগ করতে হবে।
২। কামরাঙা শিম চাষ করার জন্য জমিতে মাদায় ৪ থেকে ৫ কেজি গোবর সারের প্রয়োজন। এবং শতকপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমওপি সার দিতে হবে। এটা জমি চাষের সময় জমির মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
৩। কামরাঙা শিম চাষে ইউরিয়া সার না দিলেও চলে।
৪। সার দেয়ার সময় মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
কামরাঙা শীম চাষে জমি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানি জমলে অবশ্যই তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা ও নিড়ানি
১। কামরাঙা শিম চাষে জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। জমিতে আগাছা হলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
২। তাহলে গাছের বাড়বাড়তি ও ফলন ভালো পাওয়া যায়। গাছ একটু বড় হলেই গাছে বাউনি দিতে হবে।
৩। ১ থেকে ২ মিটার শক্ত কাঠি বা খুঁটি পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগদমন
১। কামরাঙা শিমে তেমন পোকা বা রোগের আক্রমণ হয় না। তবে জাব পোকা ও ফলছিদ্রকারী পোকা মাঝেমধ্যে গাছে আক্রমণ করে।
২। এই পোকা দমন করতে হলে শিম গাছের লতার প্যাচ খুলে গাছকে ঝোপালো হতে সাহায্যে করলে এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩। এছাড়াও আলগা মরিচা রোগ ও পাতায় দাগ পড়া রোগ শিম গাছে দেখাঁ যায়। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৪। শিকড়ে অনেক সময় কৃমির আক্রমণ হয় এবং আক্রান্ত শিকড় খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
কামরাঙা শিম গাছে সাধারণত অক্টোবর মাসে ফুল ধরে এবং পুরা শীতকাল জুড়েই ফল ধরতে থাকে। কামরাঙা শিম তুলতে হলে ধাপে ধাপে কচি ফল সংগ্রহ করতে হবে। বেশি বয়স হয়ে গেলে এই শিম খাওয়ার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। শতকপ্রতি ১০০ কেজি কামরাঙা শিম পাওয়া সম্ভব।