নিজস্ব প্রতিনিধি : নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় কর্ণফুলীতে বাড়ছে এলপি গ্যাসের চাহিদা। অপরদিকে, বিস্ফোরণ অধিদফতর কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায়, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা মানছে না কোন নিয়ম নীতি। চায়ের দোকানেও দেদারকে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস। নেই অধিকাংশ দোকানদারদের কোন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স। এর ফলে, যেকোন মুহুর্তেই ঘটতে পারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলায় বাড়ছে না গ্যাস বোতল ব্যবহারের নিরাপত্তা, অগ্নিনির্বাপক কোন যন্ত্র ছাড়াই ঘরে ঘরে এলপিজি গ্যাস। অনেকে নতুন করে এসবের নাম দিয়েছেন বোতল বোমা। ফলে, যানবাহন ও গৃহস্থালি জ্বালানির গ্যাস সিলিন্ডার ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার, ৫ বছর পরপর রিটেস্ট না করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও হতাহত এবং আগুন লাগার খবর ক্রমশ বাড়ছে।
জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলার কোথাও না কোথাও দূর্ঘটনা ঘটছেই। ফায়ার সার্ভিসের দাবি অনেকটা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট, সিগারেটের আগুন থেকে দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা। অথচ যার গভীরে রয়েছে, এসব গ্যাসের বোতল থেকে আগুন লাগার খবর। এসব মৃত্যুসঙ্গী বোমা ঘরে নিয়েই বসবাস করছে উপজেলার প্রায় অর্ধ লাখো মানুষ।
ভুক্তভোগিরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন তাঁরাই আবার এই সিলিন্ডার পরীক্ষার সনদ দিয়ে থাকেন। সিলিন্ডারের সমস্যার কারণ থেকেই এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। কর্ণফুলীতে ছোট বড় দু’শতাধিক মিল ফ্যাক্টরীতে ব্যবহার হচ্ছে প্রচুর গ্যাস বোতল। আশেপাশেই মানুষের জনবসতি। উপজেলায় নেই ফায়ার সার্ভিস। শহর হতে দমকল বাহিনী আসতে আসতে ৫০% পুড়ে ছাই। কোন কোন ঘটনায় পুরোটাই জ্বলে ছাই হয়ে যায়। এমনকি মহাসড়কে ও উপজেলায় চলাচল করা যানবাহনের একেকটিতে ২থেকে ৬টি সিলিন্ডার পর্যন্ত সংযোজন করা হয়। যেন বোমা বহনকারী গাড়িতে আমরা চলছি প্রতিনিয়ত চরম নিরাপত্তাহীনতায়।
ঘুরে দেখা যায় কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহার ক্রসিং, কলেজ বাজার, মইজ্জ্যারটেক বাজার, সৈন্যেরটেক বাজার, ফকিরন্নির বাজার বোর্ড বাজার, ইছানগর বাজার, চরপাথরঘাটা বাজারের অর্ধশত দোকানে গ্যাসের বোতল বিক্রি করছে অবাধে। নেই কোন সরকারের তদারকি। সবচেয়ে বড় সমস্যা নিয়ম বিধিতে খুচরা দোকানে ১০টার অধিক বোতল না রাখার আইন থাকলেও বহু বোতল মজুত করে রেখেছে দোকানদার। মানছে না আইন, ফলে নিরাপত্তাহীনতায় জনগণ যেন বসবাস করছে বোতলজাত গ্যাস বোমার উপর। উপজেলার সবকটি বাজার ঘুরে নজরে পড়ে শিকলবাহার কলেজ বাজার মহাসড়কের উপর বিসমিল্লাহ ট্রেডিং নামক দোকানে প্রচুর গ্যাস বোতলের স্তুপ। দোকান ছাড়িয়ে সড়কের উপরও ছড়িয়ে রেখেছে। একই রকম দৃশ্য চোখে পড়ে চরপাথরঘাটার খোয়াজনগরের সিডিএ সড়কের বহু জায়গায়।
জানা যায়, অনেক দোকানদার ১২ কেজি বোতল থেকে রাতের বেলায় অন্য বোতলে গ্যাস ফিলিং করে। বড় বোতল হতে ছোট বোতলে ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে গ্যাস ভর্তি করে। গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন করে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মসকসহ দাম নির্ধারিত করেছে। এতে দাম পড়বে ৯০৬ টাকা, যা আগে ছিল ৯৭৫ টাকা। অর্থাৎ ১২ কেজি সিলিন্ডারে ৬৯ টাকা কমেছে।
কিন্তু কর্ণফুলীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে তথ্য পাওয়া যায়, দৌলতপুর, ফাজিল খাঁর হাটের এন মোহাম্মদ হার্ডওয়্যার অ্যান্ড গ্যাস ষ্টোরে ওমেরা ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার টাকা, বিন হাবিব ১২ কেজি ৯১০ টাকা ও বিএম ১২ কেজি ৯২০ টাকা। দৌলতপুর ফাজিল খাঁর হাট বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে কেইপি জেড শিল্প এলাকার মেসার্স আমিন রেফ্রিজারেশনে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৯৫০ টাকা।
এছাড়াও ফকিরন্নির হাটের মিছরি এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯৫০ টাকা, শিকলবাহার মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯৫০ টাকা, শিকলবাহার খাজা মালেক শাহ্ এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯৫০ টাকা, খুইদ্যারটেক খাজা আজমেরী এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ১ হাজার টাকা। খুইদ্যারটেক শাহ্স‚ফি সিরিকোটি এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯৪০ টাকা, ব্রীজঘাটের মেসার্স নেয়ামত শাহ্ এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯০০ টাকা, পাশের মেসার্স মমতাজ এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯০০ টাকা, মাষ্টার হাটের মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯৫০ টাকা, একই বাজারের আমিন ব্রাদার্সে এলপি গ্যাস ১২ কেজি ৯৫০ টাকা। কিন্তু কয়েকটি দোকানে ১২ কেজি লেখা গ্যাস সিলিন্ডার বোতল ওজন করলে, লক্ষ্য করা যায় ১/২ কেজি ওজনে কম। অথচ দাম রাখছেন বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে তিন হাজার ২০০ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ঐ সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে, এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা জরুরি। প্রতিটি সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। ১০ থেকে ১৫ বছর। এরপর সেগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হয়। কিন্তু দেশে গাড়িতে যেটা ১০ বছর বা ১৫ বছর আগে লাগানো হয় সেটা চলতেই থাকে। একই অবস্থা বাসাবাড়ির বোতল গ্যাসের। সেগুলো খুবই ঝুকিপূর্ণ এবং যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নজরদারির পাশাপাশি দরকার স্থানীয়দের সাবধানতা অবলম্বন।
এসব যত্রতত্র এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য ইতোমধ্যে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লোকজনের সাথে কথা বলা হয়েছে। উনারা সময় দিলেই শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’