সাজ্জাদ মেহের || শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।বলা হয়, যে জাতি শিক্ষিত নয় সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশে শিক্ষার বিকাশ ঘটানো একটা কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ। যদিও সরকার শিক্ষাকে সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে তবুও গ্রাম বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় থেকে যায় অনেকটা ফাঁকফোকর।শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতে একজন ছাত্র সম্পূর্ণ শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে আরেকটু সান দিতে প্রয়োজন পড়ে পারিবারিক পরিচর্যা এবং টিউটর রাখার মতো কোন ব্যাবস্থার। কিন্তু আমাদের দেশের গ্রামে অধিকাংশ জনগোষ্টির ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব না। কারণ গ্রামীণ অনগ্রসর অনেক পরিবারেই বাবা-মা শিক্ষিত নয়। কোন ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় টিউটরের ব্যবস্থার জন্য আর্থিক অবস্থা সম্পন্ন না।
এই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে বারখাইন ইউনিয়নের একদল মেধাবী তরুণদের। ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ুয়া এই তরুণরা মিলে গড়ে তুলেছে একটি উন্মুক্ত পাঠশালা।যেখানে গরীব শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সকল ধরনের শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা করে যাচ্ছে তারা। এমন মহৎ উদ্যেগে যারা এগিয়ে এসেছেন তারা হচ্ছেন- শিলাইগড়া গ্রাম থেকে এমদাদ হোসেন রাশেদ, মোঃ জাবেদ হোসেন ইমন, কলিম উদ্দীন, সালাহ্ উদ্দীন, বারখাইন গ্রাম থেকে এস.এ.এন আজম শুভ । তারা প্রত্যেকেই ঝি.বা.শি উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র ছিলেন।
দক্ষিণ শিলাইগড়ার অন্তর্গত রশীদ মেম্বারের বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত ঘরে এই উন্মুক্ত পাঠশালার কার্যক্রম হয়ে থাকে। সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে এই পাঠশালা। চলতি আগষ্টের ০১ তারিখ মাত্র ৭ জন দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী নিয়ে গড়ে তোলা উন্মুক্ত পাঠশালার বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও রয়েছে উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র। সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরাও খুব খুশি এবং আগ্রহী। তারা তাদের মত সুবিধাবঞ্চিত বন্ধুদেরও আমন্ত্রন জানাচ্ছে তাদের সাথে প্রতিনিয়ত। এরই সুবাদে দিন দিন বেড়ে চলেছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা।
এই মহৎ উদ্যোগ প্রসঙ্গে উন্মুক্ত পাঠশালার প্রধান এমদাদ হোসেন রাশেদ এর সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তে তিনি তার বন্ধুদের সাথে এটি গড়ে তুলেছেন। অন্য সদস্য সালাহ্ উদ্দীন বলেন,”শুধু ছাত্রদের পড়ানো নয়, তাদের অভিভাবকদের শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করে যাচ্ছেন তারা”। তিনি আরো বলেন,”আমরা সার্বিকভাবে সাহায্য করতে সবসময় এগিয়ে থাকবো কিন্তু আমাদের শিক্ষা সরঞ্জামের অভাবে আমরা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছিনা। শিক্ষার্থীদের মাঠিতে বসে পড়তে হচ্ছে বসার বেঞ্চ না থাকার কারণে, এছাড়াও নেই কোন বোর্ড। ফলে সঠিক ভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না”। অভিবাবকরা বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের ফলে তারা খুশি এবং কৃতজ্ঞতা জানান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকা সবার প্রতি।।
সকলেই আশা করেন যে, সমাজের উচ্চস্থরের মানুষরা সুদৃষ্টি দিবেন এটির প্রতি। এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা সরঞ্জাম দিতে এগিয়ে আসবেন। ফলে শিক্ষা পৌঁছে যাবে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের দোরগোড়ায়।